ভ্রমণ বিষয়ে শরীয়াহ কি বলেঃ সফর বা ভ্রমণ সংক্রান্ত কোরানের আয়াত

ভ্রমণ বিষয়ে শরীয়াহ কি বলেঃ

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মানব জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত জীবন আমাদের একটি অনন্ত ভ্রমণের ছোট্ট অংশ বিশেষ। অনন্ত ভ্রমণ বলছি কারণ আমাদের এই জীবনের ভ্রমণ বা পথ চলা শুরু হয় রুহের জগত থেকে। সেই বিবেচনায় আমাদের দুনিয়ার জীবন অনন্ত পথ চলারই ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ। তাই ভ্রমণ বিষয়ে শরীয়াহ কি বলে অর্থাৎ সফর বা ভ্রমণ সংক্রান্ত কোরানের আয়াতসমূহ কি বলে, আসুন জেনে নিই।

আজকের এই লেখায় আমরা ভ্রমণের বিষয় নিয়ে কথা বলব অর্থাৎ ইসলামিক জীবনে বাস্তব ভিত্তিক প্রয়োগের জন্য ভ্রমণ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে কি বলা হয়েছে কেন আমরা ভ্রমণ করব এই বিষয়গুলি নিয়ে সম্পূর্ণ কোরআন হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হবে। আসুন আমরা দেখে নেই মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ভ্রমণের কতটা গুরুত্ব দেওয় হয়েছে, সরাসরি আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভ্রমণ বিষয়ে কি বলেছেন।

পবিত্র কোরআনের ভাষা যেহেতু আরবি আসুন আমরা জেনে নেই ভ্রমণকে আরবিতে কি বলা হয়। ভ্রমণের আরবি শব্দ হল সফর, ছায়ের, রেহলাত ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো ইসলামের ৫ম স্তম্ভ হজ অর্থ ভ্রমণ এবং ওমরা শব্দের অর্থ ও ভ্রমণ।

ভ্রমণ শুধুমাত্র আনন্দের জন্য নয়। আসলে ভ্রমণ একাধারে যেমন এবাদত অন্যদিকে এটি জ্ঞান প্রজ্ঞা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার একটি বিরাট সমন্বয় যা মানুষকে করে তোলে আরো পরিপক্ক। আপনি যদি পৃথিবীর ভৌগলিক গঠন ও সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, প্রথা কৃষ্টি কালচার ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে ভ্রমণের কোন বিকল্প নাই। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বারবার ভ্রমণের বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

যেমন, সূরা ইউসুফের ১০৯ নম্বর ”আয়াতে বলা হয়েছে তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনা এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখেনা যারা মুত্তাকী তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়, তোমরা কি বোঝনা?”

আল্লাহ তাআলা সূরা মুমিনের ২১ নম্বর আয়াতে আরো বলেন, ”এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না?  করলে দেখতো এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ ছিলনা।”

তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর

কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ

সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি, আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে

সর্বশক্তিমান

সূরা আনকাবুত আয়াত: ২০

একই সূরার ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবার বলেন, “তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনা ও দেখেনা তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করতো তা তাদের কোন কাজে আসেনি।”

আপনি যদি ভ্রমণ বা সফর করেন তাহলে আপনি আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি রহস্য সরাসরি অবলোকন করার সুযোগ পাবেন এবং বুঝতে পারবেন যে আল্লাহর কুদরত এবং শক্তি কত প্রবল, বৈজ্ঞানিক, কত রহস্যময়। চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে আমরা আমাদের চিন্তাশক্তির শেষ পর্যায়ে গিয়েও আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করতে বারবারই ব্যর্থ হব কারণ এই মহাবিশ্ব যে মহাশক্তিশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন তার প্রতিটি পড়রতে রয়েছে রহস্য।

আল্লাহ তায়াআলা সূরা আনকাবুত এর ২০ নম্বর আয়াত এ বলেছেন, ”তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি, আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান”।

”তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর

কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ

সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি, আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে

সর্বশক্তিমান”

– সূরা আনকাবুত আয়াত: ২০

পৃথিবীর যে স্থানেই আপনি ভ্রমণ করেন না কেন চারপাশের আকাশ, নদী, সাগর, গ্রহ, নক্ষত্র, গাছপালা পাহাড়-পর্বত এর সব কিছুতে তাকালেই আমরা দেখতে পাব প্রতিটি আল্লাহর কুদরতের অংশ।

আল কুরআনের ভাষায় ”তাদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো”। – সূরা সাবা (৩৪), আয়াত ১৮।

”তাদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ

করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে বহু জনপদ

স্থাপন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম তোমরা

এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো”।

– সূরা সাবা, আয়াত: ১৮

ইসলামিক স্কলার যারা আছেন তারা সবসময়ই ভ্রমণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন যে, প্রত্যেক মুসলমান তার শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ভ্রমন করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা বলেন ”তোমাদের পূর্বে বহু বিধান ব্যবস্থা গত হয়েছে, সুতরাং তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ কর এবং দেখো মিথ্যার কি পরিণাম”। সুরা আল-ইমরান (৩), আয়াত- ১৩৭।

‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১১)।

‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো,

যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কী

হয়েছিল!’

– সুরা আনআম, আয়াত: ১১

‘সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে?” (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩৬)।

‘পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৬৯)।

‘এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত এদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্যএবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদিগকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ২১)।

‘এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত এদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল।

পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর।

অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং

আল্লাহর শাস্তি হতে তাদিগকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।’

– সুরা মুমিন, আয়াত: ২১

‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে’! তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪২)।

কোরআনের বর্ণনায়, ‘কুরাইশদের অনুরাগ, তাদের আসক্তি শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ। সুতরাং তাদের উচিত এই (কাবা) ঘরের প্রভুর ইবাদত করা। যিনি ক্ষুধায় তাদের অন্ন দিয়েছেন; ভয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তা।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১০৪)।

Leave a Reply