Boarding Pass Er Sekal Ekal বোর্ডিং পাসের সেকাল একাল

বোর্ডিং-পাসের-সেকাল-এ

আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এয়ারলাইনস হতে যে সমস্ত কাগজের বোর্ডিং পাস দেয় যাত্রীদের কাছে তা কিন্তু কেবল বিমানেস সিট খোজার টিকেট নয় বরং আরো বেশী কিছু যা মানুষের মনের মনিকোঠায় রক্ষিত থাকে অনেক অনেক দিন। তাই বোর্ডিং পাসের সেকাল একাল নিয়ে সাজিয়েছি এই পোস্ট যা সাজাতে সাহায্য নিয়েছি সি এন এন এর।

চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো আপানার জীবনে ব্যবহৃত বোর্ডিং পাসগুলো কি ফেলে দিয়েছেন নাকি আলমারির অতি যত্নে রাখার জিনিসপত্রের সাথে রেখেছেন ভালবাসার, আবেগের আর মহামূল্যবান স্মৃতির। একটু থেমে দেখার মত নস্টালজিক এক বুকমার্ক।

২০২৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স এমিরেটস ঘোষনা করেছে তারা প্রাথমিকভাবে কিছু যাত্রীর কাগুজে বোর্ডিং কার্ড এর পরিবর্তে ডিজিটাল পাস নিয়ে আসবে। আর এমিরেটস এয়ারলাইনস এর দেখাদেখি অন্যান্য এয়ারলাইনসগুলো একই পথ অনুসরন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।  

এটি কাগুজে বোর্ডিং পাসের শেষের শুরু কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এমন শঙ্কার মধ্যেই সিএনএন-এর কাছে অনেক পাঠকই লিখেছেন, কেন তারা পুরনো বোর্ডিং পাস সংরক্ষণ করেন। সেগুলোর পেছনের গল্পও তারা জানিয়েছেন। 

আসুন দেখা যাক সিএনএন (CNN) গবেষণায় কয়েক দশক ধরে কাগজের বোর্ডিং পাসের ধরন কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে জেনে নিই।

১৯৫০ এর দশকে কেমন ছিল টিকেট জ্যাকেট?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৬০ এর দশকের শেষভাগ বা ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে ফ্লাইটের টিকেট (Flight Ticket) রাখা হতো একটি খামে যার অন্য নাম ছিল টিকেট জ্যাকেট (Ticket Jacket or Ticket Wallet) বা টিকেট ওয়ালেট বলা হতো। এ ব্যাপারে ভ্রমণ শিল্প বিশেষজ্ঞ Henry H Hurtvelt বলেন, কিছু এয়ারলাইন্সের টিকেট জ্যাকেট বোর্ডিং কার্ডের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতো। 

যাত্রীর পরিচয় সম্বলিত তথ্য যেমন, ফ্লাইট নম্বর, যাত্রীর নাম, এবং বিমান বন্দরের কোড লেখা থাকত ফ্লাইট জ্যাকেটের উপর। ”তখন বিমানের সিট পূর্বে নির্ধারণ করা থাকত না তাই যাত্রীরা বিমানে উঠে যে কোন একটি আসন বেছে নিতেন” – বিমান ইতিহাসবিদ David H. Stringer.

১৯৬০ এর দশকের আসন নির্ধারণ স্টিকি ট্যাগ পদ্ধতিঃ

এ সময়ে বড় বড় বিমান যুক্ত হতে থাকে এয়ারলাইন গুলোতে। David Stringer বলেন এ সময়েই আসন নির্ধারণ শুরু হয়। সিটগুলোর চার্টে স্টিকি ট্যাগ থাকত। যাত্রীরা সিট গ্রহন করার পর ঐ সিটের স্টিকি ট্যাগ উঠিয়ে টিকেট জ্যাকেটে লাগিয়ে দেওয়া হতো।  

ছবি: সিএনএন

১৯৬০ এর দশকের পৃথক বোর্ডিং পাসঃ

এ যুগে বোর্ডিং পাস আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। টিকেট জ্যাকেট বাদ দিয়ে শুধু বোডিং পাশ দেওয়া হত যার থাকত দুটি অংশ। বিমানে ওঠার সময় বিমান বালারা ছোট অংশটি কেটে নিয়ে নিতেন।

১৯৭০ এর দশকের কম্পিউটার প্রিন্টেড বোর্ডিং পাসঃ 

সত্তর এর দশকে টিকেট পদ্ধতিতে আবার পরিবর্তন আসে। শুরু হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে টিকেট প্রিন্ট। Hurt Belt বলেন, এর ফলে এয়ারলাইন্স/ এজেন্সিগুলো অফিসে সহজে বোর্ডিং পাস ছাপাতে পারতেন। এ সময় টিকেটের ডিজাইনও হয় কম্পিউটার ফ্রেন্ডলি।

ছবি: সিএনএন

সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স এর প্লাস্টিকের বোর্ডিং পাসঃ

সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন অন্যদের থেকে আলাদা প্লাস্টিকের তৈরি বোর্ডিং পাস দিত যাত্রীদের। সুতরাং আসন নাম্বার প্রিন্ট করার প্রয়োজন ছিল না । যাত্রীরা বিমানে প্রবেশ করার সময় বোর্ডিং পাস নিয়ে নেওয়া হতো। 

ছবি: সিএনএন

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর বিমান ব্যবস্থাপনায আসে ব্যাপক পরিবর্তন। ফলে অধিকতর নিরাপত্তার কারণে সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনকে ধীরে ধীরে তাদের প্লাস্টিকের বোর্ডিং পাস বন্ধ করে দিতে হয়। 

১৯৮০ এর দশকের একই কাগজে টিকেট বোর্ডিং পাস

১৯৮৩ সালে টিকেটের পিছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ লাগানো থাকত যাতে লিপিবদ্ধ ইলেকট্রনিক তথ্য টিকেট ও বোর্ডিং পাশ উভয়ের কাজ করত।  

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ বোর্ডিং পাসের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রিন্ট করতে হতে।  

১৯৯০ এর দশকে আসে বারকোড 

১৯৯০ এর দশকে একমাত্রিক এবং ২০০৫ সালে দ্বি-মাত্রিক বারকোড সম্বলিত বোডিং পাস আসে।

ছবি: সিএনএন

১৯৯০ এর দশকে চালু হয় টিকেটিং অনলাইন চেকইন

আইএটিএ ১৯৯৪ সালে চালু হওয়া ই-টিকেট এর মানদন্ড ঠিক করে দেয় ১৯৯৭ সালে। তবে শতভাগ ই-টিকেটিং চালু হয় ২০০৮ সালে।

বিশ্লেষক হার্টভেল্ট এর মতে দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডিং পাসের আকার টিকেটের সমান থাকলেও ঘরের প্রিন্টারের জন্য উপযুক্ত করতে পরে ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

একবিংশ শতাব্দীর বোর্ডিং পাস যা কাগজবিহীন 

এয়ারলাইনগুলো মোবাইলের মাধ্যমে চেক-ইন করার কাজ শুরু করে ২০০৮ সালে এবং এ থেকেই শুরু হয় পেপারলেস বোর্ডিং পাস।  

জুনিপার রিসার্চ দিচ্ছে আরো চমকপ্রদ খবর, আর তা হলো ২০২৩ সালে সাড়ে ৪  বিলিয়নের বেশি বোর্ডিং কার্ড ইস্যু হতে পারে যার ৫৩% হবে মোবাইলে। আর ২০২৭ সালে তা ৭৫% এ গিয়ে দাঁড়াবে বলে তাদের ধারনা। 

নিকট ভবিষ্যতে কি আসছে? 

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স এমিরেটস ঘোষনা করেছে তারা প্রাথমিকভাবে কিছু যাত্রীর কাগুজে বোর্ডিং কার্ড এর পরিবর্তে ডিজিটাল পাস নিয়ে আসবে। আর এমিরেটস এয়ারলাইনস এর দেখাদেখি অন্যান্য এয়ারলাইনসগুলো একই পথ অনুসরন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাহলে এটাই কি কাগুজে বোর্ডিং পাসের শেষের শুরু? 

সময়ের পরিক্রমায় এর ভবিষ্যতের হাতে। 

ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ জন ডেক কিন্তু এমনটাই মনে করেন। তার মতে, প্রত্যেক এয়ারলাইন কাগুজে টিকেট থেকে বায়োমেট্রিকে দিকে ঝুঁকবে। ফলে বোর্ডিং পাসের কোনো প্রয়োজনই হবে না। 

স্মৃতিচিহ্ন কিংবা বিশেষ ভ্রমণের শরীরী প্রমাণ 

যারা বোর্ডিং পাস স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষন করেন তারা এই পুরোপুরি ডিজিটাল করণে যার পর নাই হতাস। হার্টভেল্ট যথার্তই বলেন, “কিছু সময় একটি ফ্লাইট কেবল পাখাযুক্ত যানে চড়া হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকে না। কিছু কিছু যাত্রা বিশেষও হয়ে থাকে। বোর্ডিং পাস এসব যাত্রার স্মৃতি হিসেবে থেকে যায় আজীবন”। 

সিএনএন এর অনেক পাঠক বোর্ডিং পাস জমানো এবং তার পেছনের গল্পের কথা তুলে ধরেন। 

ব্রায়ান বায়ুম নামের এক পাঠক জানান, ১৯৭১ সালে তিনি প্রথম বিমানে চড়েন। ১,০০০ এর বেশি বার তিনি বিমান ভ্রমণ করেছেন এবং সেগুলোর বোর্ডিং পাস তার কাছে সংরক্ষিত আছে। 

ব্রায়ান আরো বলেন, “ডিসি-৩, ইলেক্ট্রা, ৭০৭ এবং কানকোর্ড এর মতো বিমান এখন ব্যবহৃত হয় না। সেগুলোতে চড়ার প্রমাণ তার কাছে থাকা ছোট্ট বোর্ডিং পাসগুলো। আর এ বিষয়টি তাকে পুলকিত করে”। 

২৫ বছর আগে ভারতের মুম্বাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রাহুল পুন্নিয়াহ। বিদেশে নতুন জীবন শুরু করার স্মৃতি হিসেবে সেদিনের বোর্ডিং পাস তিনি এখনো সংরক্ষণ করে রেখেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর সুজেন ওয়েকার বলেন, টুইন টাওয়ারে হামলার দিনের ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস আমি এখনো সংরক্ষণ করে রেখেছি। ইতালির মিলান থেকে সান ফ্রান্সিসেকো যাওয়ার কথা ছিল আমার। বিমানটি নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ে কিন্তু দুর্ঘটনার খবরে যুক্তরাজ্যের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তা আবারও ইতালিতে ফিরে আসে।